বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমরা পরবর্তী ঘটনা ঘটানোর সরঞ্জামাদি তৈরি করে তুলে রাখলাম। ততক্ষণে আরও দুটো ব্ল্যাকবেরী আইস্ক্রিম পটল তুললো।
"আপনি কি ঢাকার স্থানীয়?" আমি জিজ্ঞেস করলাম, "আসলে আমি নিজে এই কফিশপে নতুন এসেছি। অথচ বললেন আপনি এখানে আগেও এসেছেন। তাই আর কি!"
"আসলে..." একটু থেমে বলল, "আমি বাংলাদেশেও নতুন। আমি ইউ.এস. এ বড় হয়েছি। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। এই কফিশপের ব্যাপারে আমিও কিছুই জানি না। হাঁটতে হাঁটতে কখনও আসা হয়েছিল।"
আমি প্রথমবারের মত অপরিচিতার বেশভূষা জরিপ করলাম। হালকা সবুজ শাড়ি, হাতভর্তি চুড়ি, কাল চুল, চোখও কালো। কোথাও আমেরিকার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই!
"সত্যি? আপনাকে দেখি পুরোপুরি বাঙ্গালি মনে হয়।"
"বিদেশে থাকলেই কি কেউ বিদেশী হয়ে যায়? তাছাড়া, রক্তের টান তো ছিলই। বাংলাদেশের প্রতি আমার নিজেরও একটা আগ্রহ ছিল। এই দেশে আমি জন্মেছি। আর এদেশ থেকেই এতটা দূরে এতদিন? থাকলাম কী করে?"
প্রথমবারের মত আমি তার ভাষা আর উচ্চারন মন দিয়ে শুনলাম। একদম বিশুদ্ধ। তবে এখন একটু ভাঙ্গা-ভাঙ্গা ভাব বোঝা যাচ্ছে। মেয়ে মিথ্যা বলছে না।
শেষ বিকেলের রোদ পড়ে যাচ্ছে। গত তিন ঘণ্টা ধরে আমরা এই কফিশপে বসে আছি। এখন চুপচাপই বসে আছি। অপেক্ষা করছি সারার।
"সারা যে কেন এত দেরী করছে! যত তাড়াতাড়ি আসবে, তত তাড়াতাড়িই তো ঘটনা ঘটবে!"
"কোথায় আছেন তিনি?"
"বাবা যেমনটা বলল, কার সাথে যেন মিটিংয়ে আছে।"
"মেয়েরা কাজেই দেরি করে। সময়ের ব্যাপারে ওরা খুব নিঁখুত হয়। তা-ও আবার দেখা করার ব্যাপারে। নিশ্চয়ই কাজেই আছেন। অকারণে দেরি করার কথা নয়।"
"আপনি তো অকারণেই দেরি করছেন।"
মেয়েটা মিষ্টি করে হাসলো । "হয়ত বা এর পেছনেও কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। যে যুক্তি মেনে আমার অবচেতন মন আমাকে দেরি করতে বলছে। হতে পারে না?"
লক্ষ্য করলাম, মেয়েটার মাঝে বিন্দুমাত্র তাড়া নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ দৃশ্য খুবই বিরল। মেয়েদের এতটা সময় বাড়ির বাইরে, তাও একটা ছেলের সাথে থাকার কথা না।
অবশ্য আমেরিকায় বড় হওয়া মেয়েদের কথা ভিন্ন।
"আচ্ছা, আপনার নামটা তো জানা হলো না! By the way, আমি রাজিব। রাজিব রাইয়ান।"
মেয়েটা রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসলো। সেই হাসিতে এতটাই রহস্য সুপ্ত ছিল যে, আমার গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেল।
ও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, আমিও। আমরা হেঁটে মোটামুটি ব্যস্ত রাস্তার দিকে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। শেষ বিকেলের সোনালী আলোয় অপূর্ব দেখাচ্ছে সবকিছু।
মেয়েটা বলে উঠলো, "তুমি হিমু সিরিজের কোনো বই পড়েছ?"
"অবশ্যই! হিমুকে ছাড়া বাংলাদেশের কোনো বইপোকার উৎপাদনই সম্ভব না!" তখন আমি 'আপনি'টা হঠাৎ 'তুমি'তে নেমে যাওয়ায় চিন্তিত।
"আমারও খুব পছন্দের চরিত্র। একটা গল্পে হিমু বলেছিল, বাংলাদেশের শেষ বিকেলের আলোতে সবাইকে সুন্দর দেখায়।..."
"হুম।" নিশ্চয়ই বলবে না নাম 'রূপা'! আমি শুনে গেলাম।
"এই শেষ বিকেলের আলোর অন্য নাম কনে দেখা আলো। আচ্ছা, বিয়ের কনেদের কি এই আলোতে দেখতে হয়? তাহলে এমন অদ্ভুত নাম কেন?"
"কী জানি।"
"নাম-পরিচয় ইচ্ছে করেই দিই নি এতক্ষণ। ইচ্ছে করছিল এই আলোটার অদ্ভুত নামকরণ সার্থক করতে। তাই চাইছিলাম এই কনে দেখা আলোতেই কনের পরিচয় দেব।"
"মানে?"
আমার মাথার ওপর তৎক্ষণাৎ সাড়ে তিনশ' টনের আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। (ওজন তার বেশিও হতে পারে)
"আমি সারা। সারা হাসান।"
আর আমি অবাক, বিস্মিত, টাশকিত। আমি হতভম্ভ।
এক এক করে সব মেলালাম। সারাও তো আমেরিকায় বড় হয়েছে! আর ওর ভাষা তো বিশুদ্ধ হবেই! ও তো বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেছে! আর সেই সূত্রেই তো দেশে ফিরেছে! বাবা তো ছবি দিয়েছিল! আমি ইচ্ছে করেই দেখি নি। ইশ! কেন যে দেখলাম না!
সারা আমার মুখভঙ্গি দেখে খিল খিল করে হেসে ফেলল। সেই হাসির রিনঝিন শব্দ আমার কান হয়ে মস্তিষ্কে গিয়ে সরাসরি আঘাত হানল। মধুর সে আঘাত!
"রাজিব, তুমি তুখোড় বইপোকা হলেও হতে পারো। তবে তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এতটাও তুখোড় না। তুমি শুধু ট্রাফিক পুলিশের কাছে সাহায্য না চাওয়াটাই লক্ষ্য করলে। সাহায্য না চাওয়ার কারণটা তো খুঁজতে গেলে না!"
আমি সাড়ে তিন ঘণ্টা পেছনে ফিরে গেলাম। ঠিকই তো!
"পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো মেয়েই ঐ মুহূর্তে ঐ কাজটা করত। করাটাই যুক্তিসঙ্গত। যে করবে না, সে মস্ত বোকা। মানুষ এতটা বোকা হয় না। বিশেষ করে মেয়েরা। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে। চিৎকার করে লোক জড়ো করার প্রতিভা তাদের জন্মগত। কিন্তু আমি তা করলাম না। কিন্তু, কেন করলাম না?" নাটকীয় একটা বিরতির পর ও বলে উঠলো, "আমি তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম, তাই।"
আমি অসহায়ভাবে হাসলাম।
সারা বলল, "আমি এতক্ষণ খুব তাড়াহুড়ো করছিলাম। হঠাৎ করেই তাড়া কমে গেল। কিন্তু কেন? খেয়াল কর নি? আমার তাড়া তো তখনই কমার কথা, যখন আমার যেখানে থাকার কথা, আমি সেখানেই আছি।"
আমি আমার পায়ের কাছের সর্বনিকটস্থ ক্যাকটাসের টবটার দিকে তাকালাম। টবটা আমি নিজের মাথায় ভাঙ্গতে পারলে শান্তি পেতাম।
হে ধরণী! দ্বিধা হও! আমি তন্মধ্যে প্রবেশ করি!
ও ডিপজল ভাই! ও ডিপজল ভাই! আমার তোমার হাতের মার্কামারা ঘুষি খেতে কোনো আপত্তি নাই!
"আমার ছবিটা একবার দেখে নিলেই আর হার্ট এট্যাক করতে হতো না। তাই না, ডাক্তার সাহেব? ওরফে হার্ট স্পেশালিস্ট।"
জিভে কামড় দিয়ে ফেললাম। এ মেয়ে সব জানে।
সারা সহজ গলায় বলল, "বিরক্তি, রাগ, তাড়া_ সবই ছিল অভিনয়। আচ্ছা, কেমন অভিনয় করি বললে না তো? বলো এবার কী করতে হবে! বিয়েটা ভেঙ্গে দেব? নাকি মত পাল্টানোর সম্ভাবনা আছে? বলে ফেলো! খামোখা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে কাজ নেই।"
নিজের অজান্তেই ডান হাতটা বুকের বামপাশে চলে গেল। ধ্বক ধ্বক শব্দটা একটা কবিতার লাইন মনে করিয়ে দিল। মুখ ফুটে বেরিয়ে গেল- "বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা!"
হায়! এ যে দিনে দুপুরে ডাকাতি!
সারা তার ডাকাতিয়া মায়াময় হাসি উপহার দিয়ে বলল, "তুমি ফেঁসে গেছ, ডাক্তার!"
শেষ বিকেলের সোনালী আলোয় তার চলে যাওয়া দেখলাম আমি। লোকে বলে, কনে দেখা আলোয় সবাইকে সুন্দর দেখায়। কিন্তু তার আলোতে আমি কনে দেখা আলোটাকেও সুন্দর আর মায়াময় দেখলাম।
আমি বসে রইলাম ক্যাকটাসের টবগুলোর পাশের চেয়ারে। আরও একটা ক্যাকটাসের মত, লুণ্ঠিত।
আচ্ছা, সারা কি বিলটা পে করেছে?
হুম। ডাক্তার এবার সত্যিই ফেঁসে গেছে।
..................
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
হৃদয়
GJ Writer ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বেহৃদয়
GJ Writer ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বে